মোঃ এমরান
বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম বিভাগ
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার দক্ষিণে এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পূর্ব-দক্ষিণে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য। দুই উপজেলার অন্তত দুইশ কিলোমিটার সীমানা পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার। এই সীমানা এলাকায় বড় কোন নদী নেই। পাহাড়ী আকাঁবাকা পথ পাড়ি দিয়ে হেঁটেই পার হওয়া যায় মিয়ানমারের ওপারে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গত একবছর ধরে আলীকদমে চোরাই পথে মিয়ানমারের গবাদী পশুর রমরমা বাণিজ্য চলে আসছে। সম্প্রতি শুরু হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তেও।
দুই উপজেলার কুরুকপাতা, বাইশারী, তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, আশারতলী, জামছড়ি, বম্বনিয়াসহ বেশ কিছু চোরাকারবারি, বাজার ইজারাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিকে সঙ্গে নিয়ে এই অবৈধ বাণিজ্য করে আসছে। এতে করে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব যেমন হারাচ্ছে, ঠিক তেমনি মাদক বিস্তারের সুযোগও তৈরী করেছে এই চক্রটি। কিন্তু গত আগস্ট মাস ধরে মিয়ানমার সীমান্তে সেদেশের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় থাকার পরও মিয়ানমারে ওপার থেকে কিভাবে অবাধে গরু আসছে সেই প্রশ্ন তোলেছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।
গত এক মাসে দুই উপজেলার সীমান্ত এলাকা ঘুরে অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোথাও মিয়ানমারের বিজিপি, আবার কোথাও আরাকান আর্মি, এবং আরসার সদস্যদের সঙ্গে আতাঁত করার কারনেই বিনা বাঁধায় মিয়ানমারের গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এই ক্ষেত্রে চোরাকারবারী চক্রটি ওপারে বাংলাদেশ ভুখন্ডের তথ্য পাচার করছে কিনা সেই প্রশ্নও উঠেছে।
অবৈধ পথে বান্দরবানের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে ভারতীয় এবং মায়ানমারের গরু মহিষ ঢুকছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত বান্দরবানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাংস বিক্রির জন্যই সারাবছর বান্দরবানের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত এবং মায়ানমার থেকে অবৈধ পথে গরু আনা হয়। এসব গরুর বেশিরভাগই স্টেরয়েড দিয়ে মোটাতাজা করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত এবং মায়ানমার থেকে আসা গরু মাংসের দোকানগুলোতে কোনো রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই জবাই করে বিক্রি করা হয়। এসব গরুর মাংসের মাধ্যমে জনসাধারণ নানান জটিল রোগে আক্রান্তের আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে আলীকদম উপজেলার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী পোয়ামুহুরী-কুরুকপাতা এলাকা দিয়ে গত এক বছরের অধিক সময় ধরে অবৈধ গরুর ব্যবসা চলে আসছে। এই সময়ে আলীকদম উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি ও পুলিশ একাধিক অভিযান করে অবৈধ গরু আটক করতে সক্ষম হয়। গত কয়েকমাস ধরে আলীকদম প্রশাসন চোরাই গরু আটকে তৎপর হলে চোরাকারবারিরা পথ পাল্টিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী, ঈদগড়, কাগজিখোলা পথ ব্যবহার করে আসছে। এখন আবারও আলীকদম সিমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই ঢুকছে অবৈধ গরু।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দায়িত্ব পালন করে গরু চালান এলাকার বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এসব চোরাকারবারিরা। এক্ষেত্রে কেউ পুজি, কেউ ক্ষমতা বিনোয়াগ করে থাকে। আর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্রধানদের প্রত্যেক গরুর জন্য ১৫০০ টাকা করে সিন্ডিকেট প্রধানরা আদায় করে থাকে। যে টাকা নেওয়া হয় বিভিন্ন খাতে ‘ম্যানেজ’ করার নামে।
স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি গরু ব্যবসার নামে যেসব ব্যাক্তি সক্রিয় হয়েছে তাদের অনেকে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত আবার অনেকের রয়েছে মামলাও। আবার কেউ চোরাই কাঠ ব্যবসায়ী।
দুই উপজেলার সচেতন নাগরিকদের মতে, মিয়ানমারের চোরাই গরুর কারণে দেশীয় গরু খামারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি গরু ব্যবসার আড়ালে ইয়াবার বিস্তারও বেড়ে যাচ্ছে। চোরাকারবারিরা মিয়ানমারের ওপারের ব্যবসায়ী ও বিজিপির সঙ্গে সম্পর্ক না-রাখলে সীমান্তের এমন পরিস্থিতিতে গরু আনা সম্ভব নয়। তাই এসব চোরাকারবারি দ্বারা রাষ্ট্রের কোন ক্ষতি হচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।