স্টাফ রিপোর্টার-নুর সাইদ ইসলাম
নওগাঁর সাপাহারে স্কুল ক্যাম্পাসে থাকা এক স্টেশনারী দোকান মালিক বাবুলের কর্মচারী শুভ ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া এক অবুুঝ শিশুকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কৌশল ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। সাপাহার উপজেলা সদর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীর সাথে ঘটনাটি ঘটেছে।
ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশু শিক্ষার্থীর মা’রাফিনা এর দেয়া বর্ণনা মতে তার ছেলে আবু রায়হান ওই বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীতে অধ্যায়ন করে। বেশ কিছু দিন ধরে তার সন্তান বিদ্যালয়ে লেখা পড়ার প্রতি অমোনোযোগী ও উদাসীনাতার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন তার মা’ রাফিনাকে শিশুটির প্রতি যত্নবান ও বিশেষ নজর দেয়ার জন্য বলেন। দিন দিন যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে এবং পড়া লেখার প্রতি বিশেষ অমনোযোগী হয়ে পড়ছে শরীরও যেন শুকিয়ে যাচ্ছে। নানা দু:চিন্তায় পড়ে মা’ রাফিনা সম্প্রতি তার সন্তানকে চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে এক মনোরোগ বিশেজ্ঞ ডাক্তারের নিকট নিয়ে যান।
চিকিৎসক চিকিৎসা ও পরীক্ষা নিরিক্ষা করে তার শরীরে কোন রোগ না পেয়ে শিশুটির মা’কে বলেন যে, শিশুটি কোন কারণে আতঙ্কগ্রস্থ্য হয়ে হাতাশা ও দু:চিন্তায় ভুগছে। বাসায় ফিরে মা”ছেলেকে ফুঁসলাতে থাকে বাবা তোমাকে কি কেউ কিছু বলেছে অথবা কোন ভয়ভিতী দেখিয়েছে আমকে বল। অনেক ফুঁসলানোর পরে ছেলে বলে মা”ঘটনা বললে তোমাকে সে মেরে ফেলবে। মা’ ছেলেকে অভয় দিয়ে ঘটনার কথা খুলে বলতে বলে। মা’এর অভয় পেয়ে শিশু রায়হান বলে যে, অনুমান ৩মাস পূর্বে বিদ্যালয়ের কোল ঘেঁসে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্পাস চত্ত্বরে থাকা এক স্টেশনারী দোকানের সামনে খেলার সময় অসাবধানতাবশত বল লেগে ওই দোকানের একটি শো-কেসের একটি কাঁচ সামান্য ফেঁটে যায়।
এসময় ওই দোকানদার আমাকে ধমক দিয়ে বলেন যে, এই কাঁচের দাম কত তুমি জান? এক্ষুনি আমি তোমার শিক্ষককে জানাব। এসময় আমি ভয়ে থতমত হয়ে তকে বলি যে স্যারকে বলিওনা আমি তোমার কাঁচের দাম দিয়ে দিব। এর পরদিন স্কুলে এসে আমি ওই দোকানদারকে ৫শ’টাকা দেই। তখন সে আমার নিকট থেকে আমার ঠিকানা ও পরিবারের কথা জানতে চান, তখন শিশু রায়হান বলেন যে, আমার বাবা ইতালী প্রবাসী তার লেখা পড়ার জন্য সে ও তার মা’ সাপাহারে থাকেন। সুযোগ অসন্ধ্যানী দোকানদার বাবুলের কর্মচারী শুভ সুযোগ বুঝে শিশুটিকে আবারো ধমক দিয়ে বলেন যে, এই কাঁচের অনেক দাম এই টাকায় শোধ হবে না এবং এক সাথে তুমি এত টাকাও দিতে পারবেনা। প্রতি দিন ৫শ’ করে টাকা জমা দিতে হবে, আর একথা তুমি তোমার মা কিংবা অন্য কাহাকেও বলতে পারবেনা বললে তোমার মা’কে মেরে ফেলা হবে। শিশুটি তার মা’কে মেরে ফেলার কথা শুনে আরোও ভীতসন্ত্রস্থ্য হয়ে পড়েন। এর পর থেকে শিশুটি প্রতিদিন তার মা’র ব্যাগ থেকে কখনও ৩শ’ কখনও ৫শ’ টাকা চুরি করে দোকানদার বাবুলের কর্মচারী শুভকে কাঁচের দাম পরিশোধ করতে থাকে। শিশুটির মা’ ঘটনা শুনে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বিস্তারিত জানান। প্রধান শিক্ষক এবিষয়ে কোন পদক্ষপ গ্রহণ না কারায় একদিন একটি ৫শ’টাকার নোটে তার নাম সহি করে ছেলেকে দিয়ে দোকান দারকে দিতে বলে। ছেলে পূর্বের ন্যায় দোকানদারকে টাকা জমা দিয়ে বিদ্যালয়ে চলে যায়। এর কিছুক্ষন পরে শিশু রায়হানের মা রফিনা ওই দোকানে এসে ঘটনার কথা বললে প্রথমে দোকানদার অস্বিকৃতি জানান। এর পর শিশু রায়হানের মা’ রাফিনা তাকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন এবং দোকানের সামনে অনেক লোকজন জড়ো হয়। এর পর দোকানদারের ক্যাশ বাক্স চেক করে সহি করা ওই নোটটি বের হয়।
এবিষয়ে মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিরুর ইসলামের সাথে কথা হলে তিনিও ঘটনার কথা অস্বিকার করেন পরে তার নিকট সমস্ত ঘটনার কথা খুলে বললে বিদ্যালয়ের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে বলে আমি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করিনি বলে স্বিকার করেন।
এবিষয়ে আইনি কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি না তা জানতে চাইলে শিশুটির মা’ বলেন যে, দোকানটি যেহেতু পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় চত্ত্বরে অবস্থিত তাই ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট অভিযোগ দিবো বলে মনে করেছি। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চিকিৎসার জন্য বর্তমানে ভারতে রয়েছে ফিরে এলেই আমার অভিযোগ জানাব বলে জানিয়েছেন। এবিষয়ে সাপাহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল মাহমুদ এর সাথে কথা হলে তিনি জানান ঘটনা সত্য হলে বিষয়টি অবশ্যই অপরাধ তবে এপর্যন্ত তার নিকট কোন অভিযোগ আসেনি, আসলে তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
স্কুল ক্যাম্পাসের ভিতর থাকা একজন ব্যবসায়ীর এধরণের আচরণে অভিভাবকগন দারুন আতঙ্কিত ও হতাশাগ্রস্থ্য হয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।