ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় খেরুয়াজানী ইউনিয়নের পলশা গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে আবুল কালাম আজাদ অরফে কাইল্লা জাল দলিলের মাধ্যমে স্থানীয় কয়েকজনের জমি আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
এ নিয়ে মুক্তাগাছা উপজেলার খেরুয়াজানী গ্রামের বাসিন্দা মৃত আবদুল হাইয়ের ছেলে এ্যাডভোকেট মোঃ আরিফ রব্বানী সোহেল সাংবাদিকদের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়াও চলতি বছরের ১৫ জুন মুক্তাগাছা থানায় একটি সারাধণ ডায়েরি করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন আবুল কালাম আজাদ কাইল্লা ও তার ছেলে মোঃ রাজু জমি ছেড়ে দিতে এবং মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। এছাড়াও তারা ১৮ জুলাই ২২ রাতে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে হুমকি দিয়েছে, জমির দখন না ছাড়লে, আমাকে তারা গুলি করে হত্যা করবে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা যায়,পলসা মৌজার আরওআর ৭২৫ নং দাগের জমিটি সোহেলের। ১৯৬৮ সালে ৫৩ শতাংশ জমি জহোর উদ্দিন মন্ডলের কাছ থেকে ১৩৫৯ নং দলিল মূল্যে কেনেন জাহেদ আলী। তার থেকে ১৯৮৮ সালে কেনেন গিয়াস উদ্দিন মেম্বার। পরবর্তীতে তার থেকে কেনেন ওমর আলী মেম্বার। পরে ওই ৫৩ শতাংশ জমি তিন দলিলে ৫৯১৯ নং দলিল মূল্যে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য শাজাহান সিরাজের কাছে সাড়ে ১৫ শতাংশ, আবুল কালাম কাইল্লা গং এর কাছে ১৮ শতাংশ এবং ১৯৯০ সালের ২২ এপ্রিল সোহেলের চাচা মৃত সিরাজুল ইসলামের কাছে ৬৬১০ নং দলিল মূল্যে সাড়ে ১৯ শতাংশ জমি বিক্রি করেন ওমর আলী। ওই জমির ওয়ারিশ হিসাবে জমির মালিক হয় সোহেল। যা সোহেলর পিতা মৃত আব্দুল হাই ২৭০৮ নং দলিল মূল্যে ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ ছেলেকে হস্তান্তর করেন। সেই থেকেই তিনি ভোগদখলে রয়েছেন।
জমি ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে সোহেল আরও অভিযোগ করে বলেন, আব্দুল কালাম আজাদ কাইল্লা হাজী ও তার ছেলেদের যোগসাদসে অসৎ উপায়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সাব রেজিস্ট্রার ও ভেন্ডারদের কে ম্যানেজ করে,চলতি বছরের ১৮ মে ৪৫০৪ নাম্বারের একটি জাল দলিল তৈরি করেন। এবং জমির দখল নিতে এবং আমাকে জমির ভোগদখল ছেড়ে দিতে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি ও চাপ প্রয়োগ করছেন। এমন অবস্থায় পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিটি কেন তিনি নিজের নামে লিখে নিতে চাইছেন তার সঠিক বিচার দাবী করছি।
এ প্রসঙ্গে জমির পূর্ব মালিক পলসা গ্রামের আশি বছরের বৃদ্ধা ওমর আলী বলেন, আমার জমি তিনজনের কাছে দলিল মূল্যে বিক্রি করেছি। ওখানে আমার কোন জমি নাই। তবুও আবুল কালাম আজাদ বলে! ওখানে আমার নাকি জমি আছে! কথার উত্তরে আমি বললাম,আপনিও হজ্ব করেছেন, আমিও করেছি। মিথ্যা কথা বলতে পারব না। ওখানে আমার কোন জমি নাই,যা ছিল তা তিনজনের মধ্যে বিক্রি করে দিয়েছি। পরের দিন হোটেলে নিয়ে মাংস দিয়ে ভাত খাওয়ানোর পর পেপসির মধ্যে কিছুমিছু মিশিয়ে আমাকে পেপসি খাওয়ান আবুল কালাম আজাদ কাইল্লা। ওই পানি খাওয়ার পর আমার প্রকৃত সেন্স হারিয়ে যায়। সেই সুযোগে প্রতারণার মাধ্যমে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে আমাকে নিয়ে জাল দলিল করিয়ে নেয়। সে আমার সাথে প্রতারণা করেছে।ক্রয় সূত্রে আমার এ জমির প্রকৃত মালিক মো.আরিফ রাব্বানী সোহেলরা।
আরেকজন ভুক্তভোগী আবুল হোসেন বলেন,আমার এই জমি গত ৩০ বছর যাবৎ সাব কাউলা দলিল মূলে ভোগ দখল করে আসছি।হঠাৎ শুনি এই জমি আমাদের পূর্বের মালিক ওমর আলী মেম্বারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ওমর আলীকে নেশা জাতীয় দ্রব্য প্রান করিয়ে জমি লিখে নিয়ে গেছে। বিষয়টি জানার পর মুক্তাগাছা সাব রেজিস্ট্রার কে আমরা অবগত করেছি।
ভূক্তভোগী আবুল হোসেনের বাবা আবুল হিকিম বলেন, কাইল্লা হাজী এভাবে আরও অনেক মানুষের সম্পত্তি আত্মসাৎ করে ভূগ দখল করে আসছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের মামলা দেওয়ার হুমকি দেয় এবং মারধর করে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ হেলাল ও কয়েকজন বলেন কাইল্লা একটা টাউট, ছিটার,
বাটপার, এলাকার মেলা মাইনসের জমিন আত্মসাৎ করছে,কিছু দিন আগে আবুল হোসেন,শাহ আলম, মজিবর তাদের সাড়ে ১৯ শতাংশ জমিন আত্মসাৎ করছে। একই ভাবে আবুল কাশেমের ১২ কাঠা,মৃত মিয়া হোসেনে ১৫ শতাংশ, বছির উদ্দিনের ১৩ শতাংশ অবৈধ ভাবে জোর পূর্বক দখল করে রেখেছে।
অভিযোগ বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ কাইল্লাকে একাদিক বার মোবাইল ফোন করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।