লেখকঃ গিয়াসউদ্দিন
লাল মোরগটি ইন্দ্রনাথের খুবই আদরের,তার ঘরনি কতবারই বলল মোরগটি বাজারে বিক্রি করে আসতে, কিন্তু ইন্দ্রনাথ কিছুতেই বিক্রি করবেনা।
মোরগটি বেশ মোটাতাজা হয়েছে,পা গুলো ডানা গুলো দেখলেই জিবে জল চলে আসে।
ইন্দ্রনাথের ইচ্ছে হয়েছিল এটা জবাই করবে,যেই গলার কাছে ছুরি নিয়েছিল, মোরগটির কা কা শব্দে ইন্দ্রনাথের মন গলে যায়, মোরগটি যেন হাত জোড় করে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে, সেই থেকে মোরগটির প্রতি এক আশ্চর্য মানবিক ভালবাসাই সে না পারে এটি বিক্রি করতে না পারে জিহ্বার রসনা নিবারণ করতে।
এদিকে ইন্দুর ঘরনির পেরেশান, মোরগটি আর কিছুদিন পর বুডিয়ে গেলে গোস্ত আর হাড্ডি এক হবে, না পারবে উপযুক্ত দামে বিক্রি করতে বা না পারবে উদরপুর্তি করতে, এখনি বাজারে বিক্রি করে আস সে ইন্দুকে তাগাদা দেই।
ইন্দু কিছুতেই বিক্রি করবেনা, লাখ টাকায় না এমনকি জান গেলেও সে তার লাল মোরগ হাত ছাড়া করতে চাইনা।
দরজায় খট খট কা কা শব্দে আদু ঘুমে তড়িঘড়ি ঘরের বাইরে আসে ইন্দু, সামনে দাড়িয়ে কনস্টেবল চান্দু, তার হাতে শক্ত করে ধরা ইন্দুর লাল মোরগ।
ইন্দু তোমার মোরগাটা বেশ তাগড়া হয়েছে, নে ধর দুইশ টাকা বলেই কনস্টেবল চান্দু সাইকেল চালিয়ে মোরগটি নিয়ে দ্রুত ছুটল, ছুটছে ইন্দু উর্ধ্ব শ্বাসে, চান্দু ও চান্দু স্যার টাকা ফেরত নেন, আমি বিক্রি করবনা, জান গেলেও, লাখ টাকা দিলেও।
থাক থাক, সে বলি গিরি করি নিয়েছে, ইশ্বর বিচার করবি, খাবে চল, বলে ইন্দ্রনাথের বউ আরতি।
ওহে চান্দু, এত সুন্দর মোরগ, কি তাগডা মোটা পা মাংসল বক্ষ, বেশতো, দেখি দেখি বলেন থানার দারোগা করিম সাহেব।
না না স্যার ও ও আর এমনকি, গ্রামের মোরগ,শহরে আপনাদের ওদিকটাই আরো ভাল মোরগ পাওয়া যায়।
আরে চান্দু, যাও যাও তাড়াতাড়ি যাও গাড়িতে রেখে আস। তুমি গ্রাম থেকে আরেকটা কিনে নিও, বলেন দারোগা সাহেব।
করিম সাহেবের গাড়ি কিছুদুর যেতেই মালবাহী ট্রাকের ধাক্কাই গাড়ির চালক ও সে নিহত, কিছুদিন পর ঘুষের টাকাসহ ধরা খেয়ে কনস্টেবল চান্দু চাকরিচ্যুত।
খকখক কা কা, ওগো ওঠো, আমাদের লালমোরগ ফিরে এসেছে, দেখ ঔই যে মাচার উপর।
ইন্দ্রনাথ মোরগটিকে বুকে চেপে আকাশের পানে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেন বলে যাচ্ছে।
লাল মোরগ
একটি অনুগল্প।
গিয়াস উদ্দিন
সিনিয়র শিক্ষক
কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।