লকডাউনে নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন দেশে আটকে পড়া প্রবাসীরা। বিশেষ ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দেয়া হলেও প্রথম দিনের অর্ধেক ফ্লাইটই বাতিল হয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। লকডাউনে কষ্ট মেনে ঢাকায় এলেও তারা এখন নতুন কষ্টে পড়েছেন। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা গতকাল দফায় দফায় বিক্ষোভ করেছেন কয়েকটি স্থানে।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, গত কয়েকদিন সৌদি এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। ফ্লাইট চলবে কিনা সে বিষয়ে তারা কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন নি। এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য প্রবাসীদেরকে যে ফোন নম্বর দেয়া হয়েছে তা বন্ধ রয়েছে। এতে তাদেরকে নানা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়তে হয়েছে।
শুক্রবার রাতে সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে তারা জানতে পারেন ১৭ই এপ্রিল থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইট চালু হওয়ার খবর। এমন সংবাদে অনেকেই খুশি হয়েছেন। যাদের ভিসার মেয়াদ এক সপ্তাহের কম, তারা সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় এসে বিপত্তির মুখে পড়েন। সৌদি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ফিরতি টিকিটের রি-ইস্যু করতে সময়ক্ষেপণ করে। এতে অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষদিন কিংবা ২/৩ দিন বাকি থাকায় চিন্তিত হয়ে পড়েন। এরমধ্যে দুপুরে সৌদি এয়ারলাইন্সের গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে কাউন্টারের সামনে বিক্ষোভ করেন প্রবাসী যাত্রীরা। তারা জানান, ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসা এবং ফ্লাইটের দিন অতিক্রম হয়ে যাওয়ায় তারা বিক্ষোভ করেন। আগামী ১/২ দিনের মধ্যে ফ্লাইট না পেলে তারা আর সৌদি যেতে পারবেন না। ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে হয়েছে তাদের। দ্রুত সময়ের মধ্যে সৌদি আরবে ফিরে যেতে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চাইছেন তারা।
এ বিষয়ে সৌদি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সংস্থাটির ঢাকা অফিসের ব্যবস্থাপক (সেলস অ্যান্ড বুকিং) জাহিদুল ইসলাম বলেন, অবস্থানরত সৌদি গমনেচ্ছুদের আশ্বস্ত করেছি। যারা টিকিট পাবেন না তাদের টাকা ফেরত দেয়া হবে। আপাতত শুধু রোববার যে ফ্লাইটগুলো আছে, আমরা সেগুলোর টিকিট দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে এপ্রিলের ১৪, ১৫, ১৬, ১৭ এবং ১৮ তারিখের যাত্রীদের টিকিট দেয়ার চেষ্টা করছি।
এদিকে, প্রবাসী কর্মীদের জন্য বিশেষ ফ্লাইট চালুর প্রথম দিনেই চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন প্রবাসী যাত্রীরা। বিশেষ ফ্লাইটের টিকিটের জন্য রাজধানীর মতিঝিলে বিক্ষোভ করছেন তারা। জানা যায়, বিশেষ ফ্লাইট চালুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ভোররাত থেকেই বিমানের মতিঝিলের কার্যালয়ে ভিড় করেন যাত্রীরা। করোনা উপেক্ষা করে টিকিটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন তারা। যাত্রীদের অভিযোগ, বিমান টিকিট দিতে চাচ্ছে না। অথচ যাত্রী সংকট দেখিয়ে ফ্লাইট বাতিল করছে।
গতকাল শনিবার ১৪টি বিশেষ ফ্লাইট চলাচলের কথা থাকলেও এর মধ্যে ৭টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি ফ্লাইট রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। তিনটি সৌদি আরবের ও চারটি ফ্লাইট সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। পর্যাপ্ত যাত্রীর অভাব ও সৌদি আরবে ল্যান্ডিং অনুমতি না পাওয়ার কারণেই ফ্লাইটগুলো বাতিল হয়েছে। এর আগে শনিবার থেকে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়। এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় ওমানের মাসকাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে একটি বিশেষ ফ্লাইট। সৌদি আরবে ল্যান্ডিং অনুমতি না পাওয়ায় ভোর সাড়ে ছয়টার রিয়াদগামী ফ্লাইটটি ঢাকা ছাড়তে পারেনি। সৌদি আরবের নিয়মে প্রতিটি বিশেষ ফ্লাইটের জন্য আলাদা ল্যান্ডিং অনুমতির প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ার কারণে বিমান কর্তৃপক্ষ বাতিল করেছে দুবাইয়ের দুটি বিশেষ ফ্লাইট। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক তৌহিদ-উল আহসান বলেন, শনিবার পাঁচটি দেশে মোট ১৪টি বিশেষ ফ্লাইট নির্ধারিত ছিল। কিন্তু নানা কারণে সাতটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।