ডালিয়া আল মীম সমাজে বাস করতে গেলে একে অপরের প্রতি নির্ভরশীলতা, সহযোগিতা ও সহমর্মিতা একান্ত জরুরী জরুরি। মানুষ সমাজে সংঘবদ্ধভাবে বাস করতে গিয়ে একে অপরের কল্যাণে এগিয়ে আসে।
মূলত মানুষ কর্তৃক মানুষের সেবা করাকে আমরা জনসেবা বলে থাকি। মানুষের মহৎ গুণ হলো তার মনুষ্যত্ব। এ গুনের বশবর্তী হয়েই মানুষ পরের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করে।
আত্মস্বার্থ ত্যাগ করে পরের কল্যাণে ব্রতী হওয়াই জনসেবার মূল উদ্দেশ্য। মানুষের উপকার সাধনের মাধ্যমেই জনসেবায় অংশ নেওয়া যায়। জনসেবা মূলত মানুষের স্বেচ্ছাকর্ম। তবে কোন একটি নির্দিষ্ট সমাজের জন্য জনসেবার পদ্ধতি কি হবে বা হওয়া উচিত এ সম্পর্কে কোনো দিকনির্দেশনা দেয়া সম্ভব নয় । সময় ,স্থান ও জনগণের প্রয়োজন বুঝেই এ পদ্ধতি নির্ধারিত করা উচিৎ । যেমন দরিদ্রকে বছরে একদিন এক বেলা পেট ভরে খাওয়ানো বা কাউকে একটা বস্ত্র দান করা বা কারো চিকিৎসায় কিছু অর্থ দান করা ইত্যাদির মধ্যে জনসেবার পদ্ধতি সীমাবদ্ধ নয়।
ধর্ম ধর্ম , ধর্মই জীবন । প্রতিটি ধর্মগ্রন্থেই জনসেবাকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। স্রষ্টার সন্তুষ্টি লাভ করাই মানুষের মূল উদ্দেশ্য আর মানব বা জনসেবার মাধ্যমে এ সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব। জনসেবার মত মহৎ গুণের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করার প্রকৃত সময় হল ছাত্র জীবন ও কৈশোর। অপরের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখার মাঝে যে সুখ নিহিত তার সন্ধান লাভে ছাত্ররাই বেশি উদ্বুদ্ধ হয় । এগুন অর্জনের জন্য কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন হয় না। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগুন অর্জনের ছাত্রছাত্রীকে যথেষ্ট সহায়তা করতে পারে। যেমন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সেবাব্রতী দল রয়েছে। অগ্নিকাণ্ড, বন্যা ,ঘূর্ণিঝড় , মহামারী যুদ্ধ দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি দুর্যোগ ও সংকটের সময় কিভাবে জনগণের সেবা করা যায় তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা কিশোর বয়স থেকেই জনকল্যাণে ব্রতী হওয়ার শিক্ষা লাভ করে। জনসেবার মূলমঞ্চে উজ্জীবিত হয়ে পরবর্তীতে এরাই দেশের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করতে পারে এবং মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন সাধনের এগিয়ে আসতে পারে। এ দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায় ছাত্র জীবনই জনসেবা সম্বন্ধে শিক্ষালাভ করার উৎকৃষ্ট সময়।
মানবতার সেবা ও কল্যাণের জন্য আজ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। “Red Cresent Society , UNISEF, UNESCO ” প্রভৃতি সংস্থার অবদান অনস্বীকার্য। এসব আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশের মধ্যে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থা এবং এনজিও সমূহ বিভিন্ন দেশের দুঃসময়ে এবং দেশের অভ্যন্তরে যেমন : যুদ্ধ, বন্যা ,ঘূর্ণিঝড় ,মহামারী ,দুর্ভিক্ষ ইত্যাদিতে এগিয়ে আসে। এভাবে জনগণের সেবা করার চেতনা দিন দিন বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ বিষয় সম্পর্কে আমাদের ছাত্রসমাজকে স্পষ্ট ধারণা রাখা উচিত। আমাদের দেশেও এমন অনেক জনসেবা মূলক সংস্থা সংগঠন রয়েছে যে চাইলেই আমরা নিজেদেরকে জনসেবামূলক কাজে নিযুক্ত করতে পারি।
এর মধ্যে রক্তদান সংগঠন অন্যতম । প্রত্যেকটি জেলা উপজেলাতেই এই রক্তদান সংগঠন গঠন করা হয় থেকে । তাছাড়াও দরিদ্র এবং পথশিশুদের জীবনমাম উন্নয়নের প্রচেষ্টায় বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করে দরিদ্র এবং পথশিশুদের পাশে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা এক অন্যতম জনসেবার অংশ ।
আর এ জনসেবাই প্রকৃত ধর্ম । আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত আমাদের আশেপাশের মানুষকে, পরিবারের মানুষকে এবং বন্ধুবান্ধবকে এই জনসেবা মূলক কাজের প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং তাদেরকে নিয়ে বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজ করা। আমাদের প্রত্যেকটি মানুষকে জনসেবা ব্রতী হওয়া অত্যন্ত জরুরী।