ডেস্ক রিপোর্ট
রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে যে হারে রোগী আসছে তাতে আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের সব বেড ও আইসিইউ ভর্তি হয়ে যাবে। তখন পরিস্থিতি সংকটের দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির। তিনি বলেন, বর্তমানে ঢাকার বাইরে থেকে যেসব রোগী আছে তাদের ৫০ শতাংশকে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। বাকিদের হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রাখা হচ্ছে। রবিবার (৪ জুলাই) বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ আশঙ্কার কথা জানান।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির বলেন, আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত আমাদের এখানে ১৩০ জন আইসিইউতে ছিল। বর্তমানে ৩৬১টি জন রোগী ভর্তি আছে। বাকি যে ২৩১ জন রোগী তারা সবাই কিন্তু এইচডিইউতে আছে। আমাদের এখানে প্রতিটি রোগীর অবস্থা অনেকটা সিরিয়াস। আমার ধারণ ৩৬১ থেকে আজ সেটি ৪০০ অতিক্রম হয়ে যেতে পারে। গত ৫ দিনে আমরা দেখছি প্রতিদিন প্রায় গড়ে ৪০ জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছে। গতকাল প্রায় ৬০ জনের মতো ভর্তি হয়েছে।
পরিচালক আরও বলেন, যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশকেই আইসিউতে নিতে হচ্ছে। কারণ তাদের অবস্থা খুবই সিরিয়াস। বাকি যারা আছে তাদেরকে এইচডিইউতে রাখছি। আমাদের সাধারণ যে বেড আছে সেখানে কোনও রোগী রাখি না। যারা মাইনর অবস্থায় আছে তাদেরকে চিকিৎসা দিয়েই ছেড়ে দিচ্ছি।
তিনি জানান, এই হাসপাতালটি এক হাজার বেডের। এরমধ্যে ৫০০ বেড হচ্ছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সংযুক্ত। বাকি ৫০০ সিলিন্ডার বেইজড এরিয়া। প্রতিটি আলাদা আলাদা রুম। প্রতিটি রুমে একজন রোগী রাখা যাবে। এই পরিস্থিতিতে ২১২ বেডের আইসিইউ থেকে আজকের মধ্যে ১৭০টি ভরে যেতে পারে। আগামী ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে এই আইসিইউগুলো ভরে যাবে। এইচডিইউও প্রায় ভরা ভরা অবস্থায় রয়েছে। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে দেখা যাবে সেটাও প্রায় পূর্ণ হয়ে যাবে। তখন আমাকে কিন্তু অন্যান্য হাসপাতালের মতো জেনারেল বেডগুলোতে রাখতে হবে। কেউ মারা গেলে বা সুস্থ হলে বা আসন খালি হলে সেখানে তাদের স্থানান্তর করা হবে। তখন কিন্তু আমাদের সংকট দেখা দেবে।
এ কে এম নাসির বলেন, ১৫ দিনে আগেও আমাদের এখানে রোগী ছিল ৬০ থেকে ৬২ জন। তখন ৩০ জনের মতো আইসিইউতে ছিল। কিন্তু শেষ ১০ দিনে আমার এখানে আইসিইউতে তিন থেকে চারগুণ বেশি রোগী গেছে। এতগুলো সিরিয়াস রোগী আমরা দেখাশোনা করছি বলেই ঢাকায় এখনও কোনও সংকট দেখা যাচ্ছে না। যারা এখানে এসেছে তাদের ৭০ ভাগই কিন্তু ঢাকার বাইরের। বিভিন্ন জেলায় যারা সিরিয়াস হয়েছে তারাই এখানে এসেছে। তাদেরকে আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি বলেই সংকট দৃশ্যমান হচ্ছে না। আমার ধারণ আমাদের এই জায়গাটি যদি ভরে যায় তাহলে আসলেই অনেক ক্রাইসিস হয়ে যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিস্থিতি এমন দেখা দিতে পারে তখন রোগীদের আইসিউ বা এইচডিইউতে নেওয়ার মতো স্পেস থাকছে না। সেক্ষেত্রে আমরা সবাই যদি সম্মিলিতভাবে সচেতন থেকে নিজেদেরকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে পারি তাহলেই আমাদের মুক্তি মিলবে। প্রতিদিনই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকার বাইর থেকে যারা আসছে তাদের স্থায়িত্ব কিন্তু অনেক কম। এক বা দুই দিনের মধ্যেই তারা মারা যাচ্ছে। তারা সেখানে (জেলা পর্যায়ে) অনেক খারাপ হওয়ার পরই আমাদের এখানে আসছে।
তিনি আরও বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তার প্রভাব আমাদের এখানেও পড়ছে। আমরা করোনার সব ধরনের রোগীকে নিচ্ছি। গত ১৯ এপ্রিল শুরু হওয়ার পর থেকে সেটা এখনও অব্যাহত আছে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে যেসব রোগী মুমূর্ষু অবস্থায় আছে তারা আমাদের এখানেই চলে আসে। আমরাও তাদের নিচ্ছি।