মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ও মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখীতেই থাকছে। এ অবস্থায় ১৪ জুলাইয়ের পর আগামী বৃহস্পতিবার ১৫ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত শিথিল হচ্ছে লকডাউন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু হচ্ছে গণপরিবহন। এছাড়া অন্যান্য বিধিনিষেধ চালু থাকবে।
সোমবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ তথ্য জানায়। এছাড়া পরবর্তীতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এদিকে সর্বাত্মক লকডাউন দিয়েও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না পরিস্থিতি। মানুষের চলাচল সেইভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এসব বিবেচনায় সর্বাত্মক লকডাউন আরও কিছুদিন রাখার প্রাথমিক চিন্তাভাবনা ছিল। কিন্তু ঈদুল আযহা সামনে থাকায় ওই চিন্তা থেকে সরকার সরে আসছে।
করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধ আগামী বৃহস্পতিবার থেকে অনেকটাই শিথিল হয়ে যাচ্ছে। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন, দোকানপাটসহ প্রায় সবকিছুই চালুর অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে কোরবানির হাটও চলবে। এসব বিষয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুয়ায়ী কিছু নিয়ম মেনে চলতে বলা হতে পারে। এ বিষয়ে যেকোনো সময় সিদ্ধান্তের ঘোষণা হতে পারে।
তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর বর্তমান পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধ শিথিল করলে পরিস্থিতি কেমন হবে, সেটা নিয়েও আশঙ্কা আছে।
এবার যে বিধিনিষেধ চলছে, তাতে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, শপিং মল, মার্কেটসহ সব ধরনের দোকানপাট বন্ধের নির্দেশ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা আছে। এভাবে মোট ২১ ধরনের বিধিনিষেধ চলছে।
এরইমধ্যে রোববার এক আদেশে সরকারি অফিসগুলোকে ভাচুর্য়ালি জরুরি কাজকর্ম চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ রাতেই লকডাউনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। রোববার এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
তিনি জানান, সোমবার রাতে এ সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সে অনুযায়ী ১৩ জুলাই বিধিনিষেধ সংক্রান্ত আদেশ জারি হবে।
এর আগে গতকাল বিকেলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির পরামর্শে চলমান বিধিনিষেধ ফের বাড়তে পারে।
এদিকে কঠোর বিধিনিষেধ ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়ে গত ৫ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
গত ২৪ জুন জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সারাদেশে ১৪ দিনের ‘শাটডাউনে’র সুপারিশ করা হয়। কমিটির সুপারিশের আলোকে ২৮ জুন থেকে ৩০ জুন তিন দিন সীমিত পরিসরে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এরপর ১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় কঠোর বিধিনিষেধ। যা চলমান অবস্থায় গত ৫ জুলাই এক প্রজ্ঞাপনে বাড়ানো হয়।
দেশে করোনার সবশেষ পরিস্থিতি
গতকাল ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ২৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৬ হাজার ৪১৯ জনে। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ১১ হাজার ৮৭৪ জন। ফলে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১০ লাখ ২১ হাজার ১৮৯ জনে।
এর আগে শুক্রবার (৯ জুলাই) দেশে ২১২ জনের মৃত্যু হয়। ১০ জুলাই দেশে ১৮৫ জনের মৃত্যু হয়। ৮ জুলাই করোনায় দেশে ১৯৯ জনের মৃত্যু হয়। ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়ায়। এদিন মৃত্যু হয় ২০১ জনের।
গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) ১১ হাজার ৬৫১ জনের করোনা শনাক্ত হয়, যা এক দিনে ছিল সর্বোচ্চ। তার আগে মঙ্গলবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৫২৫ জন শনাক্ত হন।