সোহেল রানা (শাওন) :
কলাম লেখক
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একসঙ্গে এত শ্রমিকের মৃত্যুতে মনে দাগ লেগেছে। ঘটনাটি খুবই বেদনার। দেশে এমনিতেই করোনার তাবড়ে আমরা অসহায়। এমনকি এ ভাইরাসের সংক্রমণে শনাক্ত ও মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ায় কঠোর লকডাউন ডাকে। অফিস – আদালতসহ বাইরে সমস্ত কিছু বন্ধ থাকায় প্রশাসনের অনুমতিতে শ্রমিকরা কারখানায় কাজ চালিয়ে যায়। এমন এক সময়ে রূপগঞ্জের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আমাদের হৃদয়ে নাড়া দেয়। এর মধ্যে ৫২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় অর্ধ শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন, তারা এখন হাসপাতালে অবস্থানরত। এই ভয়াবহ আগুনের লেলিহান থেকে বাঁচতে ছাদ থেকে লাফ দিয়েও প্রাণ হারান।
আমরা দেখেছি, আমাদের দেশে অগ্নিকান্ড প্রতিনিয়ত ঘটে। রুপগঞ্জের খাদ্যপন্যের কারখানাটিতে দাহ্য পদার্থ থাকায় অগ্নিকাণ্ড আরো ভয়াবহতার রুপ নেই। বৃহস্পতিবার আগুন লাগলেও ফায়ার সার্ভিস পুরোপুরি আগুন নেভাতে পারেনি। বরং তারপর দিন শুক্রবার দুপুরে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়।
কারখানা থেকে মৃতদেহ বেরিয়ে আসার মর্মন্তদ দৃশ্য আমাদের দেখতে হয়। দেখতে হয় হৃদয়বিদারক কান্না ও স্বজনদের আহাজারি।
সংবাদমাধ্যম দেখে আরো কষ্ট পেলাম কারখানায় শিশু শ্রমিকও ছিল। যাদের বয়স ১২ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। এই ঘটনার সত্যাসত্য যাচাই করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অধিকাংশ মৃতদেহের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, তাদের অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তরের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে। আমার একটাই দাবি, অসহায় পরিবারগুলো যেন সাময়িক স্বস্তি পায় এবং ক্ষতিপূরণ যথাযথ হবে। শ্রমিকের শ্রমে-ঘামে প্রতিটি কারখানা যেন শ্রমিকের জন্য মৃত্যুকূপ না হয়। আর কোনো শ্রমিক যেন মৃত্যুর সম্মুখীন না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। আমরাও তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি।
পরিশেষে আমার মতবাদ, মারা যাওয়া শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনা যাবে না। তবে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসলে পরবর্তী সময়ে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড এড়ানো যাবে বলে মনে হয়।