সোহেল রানা (শাওন)।
১//
শেখ মুজিবুর রহমান ‘বঙ্গবন্ধু’ নামে খ্যাত। তিনি ধূমকেতুর মতো উদয় হয়ে মুক্তিযুদ্ধের মহা নায়কে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। তাকে বাদ দিয়ে একাত্তরের যুদ্ধ অথবা পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনা সম্পূর্ণ হওয়ার নই। ৪৬ টা বছর কেটে গেল, তিনি আমাদের মাঝে নেই। তবুও তাকে মনেপ্রাণে ভালোবেসে বাঙালি মনে রেখেছে। তা পক্ষে অথবা বিপক্ষে। তিনি বাঙালি জাতির নক্ষত্র হিসেবে আছেন। তিনি স্বাধীনতার ঘোষক। তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি লড়েছেন দেশের মুক্তির এবং জনগণের জন্য। তারপরও কিছু মানুষ ও গোষ্ঠী আছেন। এদের কাজ হচ্ছে মনগড়া কিছু বলে কোন মহলকে খুশি করা। তাতে কি শেখ মুজিবের বীরত্বের অমর ইতিহাস পাল্টানো সম্ভব! আমার তো সেটা মনে হয় না।
২//
১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় এই বীর নেতা জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই তার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শুরু। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রী লাভ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অধ্যয়ন করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতি ও দেশরতে যুক্ত হন। ভাষা -আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি বহুবার কারাবরণ করেছেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে শেখ মুজিব বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধে বাঙালির ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বীর নেতার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি তার জীবনে ঘটে যায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দিবাগত রাতে তার স্বাধীনতার ঘোষণা সারা বাংলায় নেটওয়ার্কের মতো ছড়িয়ে যায়। একজন বীর নেতা হিসেবে লাল কালিতে নিজের নাম লিপিবদ্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের প্রতিটি সেক্টরে বিশেষ অবদান রাখেন। বীর নেতা কাকে বলে দেখিয়ে দেন বিশ্বকে। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি তিনি দেশে ফেরেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার মহান দায়িত্বে ব্রতী হন।
৩//
১৯৬৫ সালে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের যুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনা হচ্ছে ‘৭১’ সালের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ তাকে ইতিহাসের মহানায়কের স্বীকৃতি দিয়েছে। যে মানুষটি বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন জীবন বাজি রেখে, জনগণ কি তাকে সহজে ভুলে! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মানবিক মূল্যবোধ থেকে। একদল থাকলে তো গণতন্ত্র হয় না। তাই সবকিছুর আগে তিনি সমস্ত দলের পুনরুজ্জীবন দান করেন। সব রাজনৈতিক দলকে মুক্ত করে দেন।
৪//
বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা এবং ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সংক্রান্ত বিল। বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে ঢাকা-লন্ডন রুটে বিমানের প্রথম ফ্লাইট চালু হয়। বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে তুলে দিয়েছেন এক অনন্যনায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অর্থনৈতিক,সামাজিক, কৃষি, শিল্প, সংস্কৃতির যে সংস্কার করেন, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ হিসেবে চিহ্নিত। তার সময়ে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রকৃতপক্ষে জনগণের জন্য সুফল এনেছিল। দেশের বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃপ্ত পদে এগিয়ে যাওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দিকে তাকালে মনে হয়—————- তিনি এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। তার সমস্ত কিছুই ইতিহাসে মোড়ানো। ৫৫ বছরের জীবনে এত কিছু করা সম্ভব — তার জ্বলন্ত প্রমাণ বীর নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
লেখক: সাহিত্যিক ও কলামিস্ট।