কোরবানির ঈদের সময় লকডাউন থাকলে দরকার হলে ট্রেনযোগে গবাদিপশু পরিবহন করা হবে। ট্রেন স্ট্রেশন থেকে নেওয়া হবে নির্ধারিত হাটে। রাজধানী ও বিভাগীয় শহরসহ অনেক জেলায়ই ট্রেন চলাচল করে। এতে পশু পরিবহনে ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে। প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মন্ত্রী জানান, চলতি বছর কোরবানির পশু পর্যাপ্ত থাকায় অবৈধভাবে কোনো পশু দেশের বাইরে থেকে আসবে না। কোরবানির পশু পরিবহনে প্রয়োজনে স্পেশাল ট্রেন থাকবে। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেই কোরবানি নিশ্চিত করা হবে। পশু বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় রাস্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা করা হবে।
সূত্র জানায়, সারা দেশে এখন ছোট-বড় প্রায় ৭ লাখ গবাদি পশুর খামার রয়েছে। কোরবানি উপযোগী পশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৯ লাখ। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে নওগাঁ জেলায় জনসমাগম ঠেকাতে স্থায়ী পশুর হাট আপাতত বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন খামারিরা। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. আজিজুর রহমান দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর প্রস্তুত। হাটে থাকবে পশু ডাক্তারদের মোবাইল টিম।
ডা. আজিজুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, সারা দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ১১৫টি কোরবানির পশুর খামার আছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৯২ হাজার, খুলনায় ১ লাখ ৭ হাজার, রংপুরে ২ লাখ ২২ হাজার, রাজশাহীতে ১ লাখ ২৭ হাজার, চট্টগ্রামে ৭৪ হাজার, মংমনসিংহে ৪০ হাজার, বরিশালে ২০ হাজার ও সিলেটে ১২ হাজারের বেশি পশুর খামার আছে। খামারগুলোতে কোরবানিযোগ্য ৪৪ লাখ ৪৭ হাজার গরু ও মহিষ আছে। ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ছাগল, খাসি ও ভেড়া আছে। আর উট ও দুম্বা ৪ হাজার ৭০০-র বেশি আছে।
সূত্র জানায়, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে নওগাঁয় চলমান বিধিনিষেধের পাশাপাশি জেলার সব পশুর হাট বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। ৭ জুলাই পর্যন্ত পশুরহাট বন্ধের এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। তবে খামার ও গৃহস্থের বাড়ি থেকে এবং অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। গত শুক্রবার জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানো হয়। কোরবানির আগ মুহূর্তে পশুর হাট বন্ধ রাখার ঘোষণায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পশু খামারি ও গৃহস্থের কপালে। কোরবানির আগে হাট না বসলে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।
জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নওগাঁ জেলায় করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যাওয়ায় জারি করা চলমান বিশেষ বিধিনিষেধের পাশাপাশি জেলার সব পশুর হাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। তবে খামার ও গৃহস্থের বাড়ি থেকে এবং অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। এছাড়া জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার, পতœীতলা ও ধামইরহাট থেকে জেলার অভ্যন্তরে এবং জেলার বাইরে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে রোগী পরিবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্য পরিববহন, জরুরি কাজে ব্যবহৃত সরকারি গাড়িসহ অন্য জরুরি সেবা-পরিষেবা কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে পাড়া-মহল্লাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান এবং স্বাস্থ্যবিধি পালনে মাইক থেকে নিয়মিত জনসচেতনতামূলক ঘোষণার ব্যবস্থা করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করে পাড়া-মহল্লায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ জোরদার করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক এসব কাজে জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের সব সচেতন নাগরিককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
নওগাঁ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ জেলায় ছোট-বড় ১০৪টি হাটবাজার রয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে ৩৮টি। জেলার মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া ও সতিহাট, নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া বাজার, পোরশা উপজেলার মশিদপুর, মহাদেপুরের মাতাজীহাট, বদলগাছীর কোলাহাট ও রানীনগরের আবাদপুকুর বৃহৎ পশুর হাট। প্রতিবছর কোরবানির ঈদ মৌসুমে এসব হাটে স্থানীয় ক্রেতা ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা গরু কিনতে আসেন। নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন খামার ও গৃহস্থের বাড়িতে এ বছর ৩ লাখ ২০ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার। জেলায় চাহিদার চেয়ে কোরবানির পশু ৮৫ হাজার বেশি রয়েছে।
নওগাঁ পৌরসভার শিবপুর এলাকার খামারি সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বছর কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য খামারে ১২টি গরু লালন-পালন করেছি। গরু কেনা ও লালন-পালন খরচ বাবদ প্রতিটি গরুর পেছনে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। গরু যে রকম হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে তাতে প্রতিটি গরু ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রির আশা আছে। কিন্তু পশুর হাট বন্ধের যে ঘোষণা শুনলাম তাতে তো চিন্তার বিষয়। হাটে দর-কষাকষি করে গুরু বিক্রি করলে একটু বেশি লাভের আশা থাকে। কোরবানির আগ পর্যন্ত হাট বন্ধ থাকলে মনে হয় বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হবে।
নওগাঁ জেলায় বেশ কয়েকটি পশুর হাটের ইজারাদার নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, পশুরহাট একেবারে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আমার মনে হয় সঠিক নয়। কারণ, কোরবানিকে কেন্দ্র করে বহু খামারি ও গৃহস্থ পশু লালন-পালন করে থাকেন একটু লাভের আশায়। এসব সময় গবাদিপশু বিক্রি করে যেটুকু লাভ হয় তা দিয়ে বছরের অধিকাংশ সময় খরচ করে থাকে। কিন্তু এই সময়ে পশুর হাট বন্ধ রাখলে তাদের বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হবে। আমি মনে করি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাটে কেনাবেচা চালু রাখা উচিত।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ডিজি ডা. আজিজুর রহমান বলেন, পশুর হাটের প্রস্তুতি নিয়ে গত রোববার অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছ। সেখানে লকডাউনের কারণে পশু হাটে নেওয়ায় (পরিবহন) সমস্যা হলে ট্রেনযোগে পশু বহনের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন তারা। করোনা ও লকডাউনের কারণে হাট বন্ধ রাখার বিষয় তাদের জানা নেই। রাজধানী ঢাকায় প্রতি বছরের মতো এবারও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা অবৈধভাবে হাট বসানোর পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে জানান নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা।