এক সময়ের মৃত প্রায় দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলাকে আরো আধুনিক করতে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ দেশ-বিদেশী ব্যবসায়ীদের ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করেছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বেশ কয়েক বছর ধরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি দিয়ে বন্দরের পণ্য খালাস ও বোঝাই হয়ে আসছে। তারপরও অনেক সময় বন্দর জেটিতে আসা জাহাজের বিশেষ করে কন্টেইনার ও কার্গো প্রজেক্ট (মেশিনারি) পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে (খালাস) দেখা দিতো ঝুঁকির। সেই ঝুঁকি এড়াতে আনা হয়েছে মাল্টিপারপাস মোবাইল ক্রেন। মঙ্গলবার (১৫ জুন) দুপুর আড়াইটায় বন্দরের ৯ নম্বর জেটিতে আধুনিক এই ক্রেন দুইটি নিয়ে আসে জার্মানের পতাকাবাহী এম,ভি উইবকী নামক বিদেশি জাহাজ। জার্মান থেকে প্রথমবারেরমত এ বন্দরে আনা হয়েছে এই দুইটি মাল্টিপারপাস মোবাইল ক্রেন। যা দিয়ে বন্দরে আসা ৬ সারির কন্টেইনার জাহাজের কন্টেইনার পণ্য দ্রুত সময়ে নিরাপদভাবে খালাস করা সম্ভব হবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, “উইবকী” জাহাজটিতে মাল্টিপারপাস মোবাইল ক্রেনের মোট ৭৩ টি প্যাকেজসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ রয়েছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এই পণ্য খালাস করে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে জার্মান প্রকৌশলীদের দিয়ে এটি সেট বা প্রস্তুত করা হবে। একই সাথে কিভাবে এই ক্রেন দিয়ে কাজ করা হবে তারও প্রশিক্ষণ দিয়ে যাবেন ওই জামার্নী প্রকৌশলীরা। তিনি আরো বলেন, মোংলা বন্দরের সাথে এই মোবাইল ক্রেন যুক্ত হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরাপদে পণ্য খালাস করা যাবে।
চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরে এই বন্দরে এক কোটি ২০ লাখ মে: টন পণ্য খালাস করা হয়েছে। নতুন মাল্টিপারপাস মোবাইল ক্রেন সংযোজন হলে এ থেকে ভবিষ্যতে পণ্য খালাস দ্বিগুন ছাড়িয়ে যাবে। ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ ঢাকার ম্যাক্সন পাওয়ার লিমিটেড কোম্পানির মাধ্যমে ক্রেন দুটি আমদানি করে বলেও চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা জানান।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের যান্ত্রিক ও তড়িৎ বিভাগের উপ-প্রধান প্রকৌশলী মোঃ মাহাবুবুর রহমান মিনা ও বিদেশি জাহাজ উইবকীর স্থানীয় শিপিং এজেন্ট অল সিসের প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন মিলন বলেন, গত দেড় মাস আগে যুক্তরাজ্যের স্যান্ডারল্যান্ড বন্দর থেকে ক্রেন দুইটি নিয়ে জাহাজটি ছেড়ে আসে। জার্মানের রকস্ট্রক ফ্যাক্টরীতে সে দেশের লিভার কোম্পানি এই ক্রেন দুইটি তৈরি করে। মঙ্গলবার দুপুরে আসা বিদেশি ওই জাহাজ থেকে ৭৩ টি প্যাকেজের ক্রেন দুইটিসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ খালাস করা হয়। তারা আরও জানান, বিদেশ থেকে আমদানি হওয়া এই ক্রেন দুইটি দিয়ে একসাথে ৪০ মেট্টিক টন পণ্য খালাস করাসহ নানা সুবিধা পাওয়া যাবে। দ্রুত ও নিরাপদভাবে কন্টেইনারসহ বন্দরে আসা রুপপুর পারমাণবিক ও রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী কার্গো প্রজেক্ট (মেশিনারি) খালাস করা হবে।এছাড়া এটা যেহেতু মোবাইল ক্রেন, তাই বন্দর জেটির অভ্যন্তরের যে কোন স্থানে ঘুরে ঘুরে এই ক্রেন থেকে পণ্য খালাসের মত সুবিধাও পাওয়া যাবে বলেও জানান তারা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্মচারী সংঘের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফিরোজ আহমেদ বলেন, ১৯৫০ সালে যাত্রা শুরু হওয়ার পর রাজনৈতিকসহ নান কারণে বৈষম্যের শিকার হয়ে এই বন্দর এক সময় লোকসানে পরিণত হয়েছিল। সেখান থেকে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই বন্দরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি আর সঠিক ব্যবস্থাপনায় এই বন্দর এখন লাভজনকে এসে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে আধুনিক ক্রেন যুক্ত হওয়ায় দ্রুত পরিসরে এই বন্দর আরো এগিয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।