করোনা আক্রান্ত স্বামী দিবেন্দ্র নাথ দাসের (৬০) পাশে বসা স্ত্রী দেবী সরকারের চোখে-মুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ। ভয় যেন কাটছিল না কোন ক্রমেই। আগুন লাগায় তাড়াহুড়ো করে স্বামীকে আইসিইউ ওয়ার্ড থেকে বের করে জায়গা নেন গাছতলায়। অক্সিজেন সিলিন্ডার না পেয়ে স্বামীর জন্য আতঙ্ক আরও বেড়ে যায় দেবী সরকারের। এক পর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অক্সিজেন সুবিধা দেন। অসহায় হয়ে গাছতলায় জায়গা নেয়া ছবিটিই যেন কথা বলে, দেবী সরকার কতটা অসহায়। দেবী সরকার ছাড়াও অন্যান্য রোগির স্বজনরা হাসপাতাল চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) বিকেলে এমনটাই চিত্র ছিল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে। তবে আগুন লাগার ঘটনায় কোনও ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
দেবী সরকার বলেন, ‘আমার স্বামীকে গত শনিবার হাসপাতালে আনা হয়। করোনা পজিটিভ ও মুমূর্ষ অবস্থায় থাকায় তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছি। হঠাৎ করেই আইসিইউতে আগুন লাগে। পরে তাড়াহুড়ো করে সেখান থেকে চিকিৎসকদের সহযোগিতায় নামিয়ে আনা হয়। পরে জায়গা নিয়েছি গাছতলায়।’
করোনা ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ওয়ার্ডে ১০জন রোগির চিকিৎসা চলছিল। স্বজনরাও ছিল রোগিদের সঙ্গে। হঠাৎ করেই বিকাল সোয়া ৩টায় আগুন লাগে আইসিইউ ওয়ার্ডের ভেতরে। মুহূতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে রোগি ও স্বজনদের মাঝে। এসময় আতঙ্ক নিয়েই স্বজন ও কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং নার্সরা দ্রুত রোগিদের বের করে নিরাপদস্থানে সরিয়ে নেন। কেউ জায়গা নেন গাছতলায় আবার কেউ মাটিতে। তাৎক্ষণিক অক্সিজেন সিলিন্ডার সুবিধা না পেয়ে করোনা রোগিদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। এসময় হাসপাতাল চত্বরে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা রোগিদের অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, করোনা ইউনিটে আগুন লাগার খবরে করোনা রোগী ও তার স্বজনরা দ্রুত হাসপাতাল থেকে নেমে আসেন। এ সময় উৎসুক জনতার ভিড় জমে। আতঙ্ক সৃষ্টি হয় রোগী ও স্বজনদের মাঝে।
টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে চলে আসি। কয়েক মিনিটের মধ্যে আগুণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তবে সব মিলিয়ে আমাদের ১৫ মিনিট সময় লাগে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গণি বলেন, আগুনের ঘটনায় কোনও ক্ষতি হয়নি। আইসিইউ ওয়ার্ডে ১০ জন রোগী ছিলেন। আমরা তাদের দ্রুত সরাতে সক্ষম হয়েছি। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন আবুল ফজল মোহা. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, রোগীদের সরিয়ে দ্রুত অন্য ওয়ার্ডে স্থানান্তর করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে আইসিইউ বন্ধ রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আইসিইউ ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হবে