1. admin@kholanewsbd24.com : admin :
ঝুঁকি নিয়েই ঢাকা ছাড়ছে মানুষ - খোলা নিউজ বিডি ২৪
রবিবার, ০৪ জুন ২০২৩, ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন
রবিবার, ০৪ জুন ২০২৩, ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
নড়াইলে ৩৯ টি ল্যাপটপ ও বিপুল পরিমাণ চোরাই মালামাল উদ্ধারের স্বীকৃতিস্বরূপ আইজিপি অর্থ পুরস্কার ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষি যন্ত্রাঅংশের মাধ্যমে বোরো ধান কাটা মাড়াই করছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুরে গীতা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত মধ্যরাতে যুবক খুন, তদন্তে মাঠে পুলিশ পারফরমেন্স বেজড গ্র্যান্টস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগমের মায়ের ইন্তেকাল সিআইডি প্রধানের সাথে Mr. Ryu কান্ট্রি ডিরেক্টর,KOICA, বাংলাদেশ এর সাক্ষাৎ জামালপুরে জমি বেদখলের পুনরুদ্ধারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন পটুয়াখালীতে ব্লাস্টের আয়োজনে অধিকার সচেতনতা মূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে পুলিশ সুপারের প্রত্যক্ষ তদারকিতে সাদুল্যাপুরে গুলি ভর্তি বিদেশী পিস্তল সহ যুবক আটক

ঝুঁকি নিয়েই ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

প্রশাসন
  • সময় : শনিবার, ২৬ জুন, ২০২১
  • ১৬৩ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ
সারাদেশে কঠোর লকডাউনের সরকারি ঘোষণা আসার পর মানুষের মধ্যে ঢাকা ছাড়ার হিড়িক পড়েছে। এ ‘লকডাউনে’ সবকিছু বন্ধের খবরে আগাম ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন অসংখ্য মানুষ। তাদের মতে, আয়-রোজগার সংকটের শঙ্কায় বাড়ি ফিরছেন তারা। কোরবানীর ঈদের কারনেও অনেকে নিজ নিজ গ্রামের উদ্দেশ্যে তড়িঘড়ি করে ঢাকা ছাড়ছেন। দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিকল্প যানবাহনে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করছেন অনেকে। সেক্ষেত্রে বাড়তি টাকা যেমন খরচ করতে হচ্ছে, তেমনি পদে পদে ভোগান্তিরও শেষ নেই। ভিড়-ব্যস্ত এসব ঘরমুখো মানুষের যাত্রায় উপেক্ষিতও করোনা ভাইরাসের স্বাস্থ্যবিধি। আজ সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথগুলোতে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

সরোজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল ও আমিন বাজার ব্রিজ এলাকা থেকে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে দূরের গন্তব্যে। সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়া, মাগুরা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে পরিবহনগুলো। যাত্রীদের গাড়িতে ওঠাতে চালকরা নানা প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন। তবে বেশিরভাগ পরিবহনে যাত্রী ওঠানো হচ্ছে ঠাসাঠাসি করে। করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়েই গ্রামে ছুটছে মানুষ। রাজধানীর আমিন বাজার ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দূরপাল্লার গন্তব্যে যেসব প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ছেড়ে যাচ্ছে সেসব যানবাহনে মানা হচ্ছে না কোনও ধরনের স্বাস্থ্যবিধি। গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে একে অপরের পাশে বসছেন দূরের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য।

গাদাগাদি করে এভাবে কেন যাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে রাজশাহীগামী সজল বলছিলেন, ‘সামনে লকডাউন দিয়ে দেওয়া হবে, আর বাস বন্ধ। এ জন্যই আমরা চলে যাচ্ছি বাড়িতে। আল্লাহ ভরসা, কিছু হবে না।’ করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতো কিছুটা রয়েছে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রাইভেটকারের আরেক যাত্রী নয়ন বলেন, ‘বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে। তবে রাস্তায় কোনও সমস্যা ছাড়াই পৌঁছাতে পারবো বলে আশা করছি। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতো কিছুটা রয়েছেই, তার পরও বাড়ি যাচ্ছি। কারণ, ঢাকায় থেকে এখন কোনও কাজ নেই।’

একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন মো. সোহেল। লকডাউনের খবর শুনে স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীতে পাঠাতে গাবতলী এসেছেন তিনি। সোহেল বলেন, ‘প্রাইভেটকার ভাড়া করে স্ত্রী-সন্তানকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। লকডাউন এক থেকে দুই মাস থাকতে পারে। সবকিছু চিন্তাভাবনা করেই ওদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। তবে ঢাকার এত কাছে হওয়া সত্ত্বেও ভাড়া বেশি নিয়েছে। আমি পাঁচ হাজার টাকায় গাড়ি ভাড়া করেছি।’

রাজশাহী যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন আক্তারসহ তার পরিবারের সদস্যরা। বিভিন্ন মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারসহ দাম-দর করছিলেন। কিন্তু কম না পাওয়ায় জন প্রতি ১৪শ’ টাকায় তিন জন মাইক্রোবাসে উঠে পড়েন। এই মাইক্রোবাসটিতেও গাদাগাদি করে ১৪ জন যাত্রী উঠানো হয়। এ সময় আক্তার বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে, তারপরও বাধ্য হয়েই রাজধানী ছাড়তে হচ্ছে। সামনের লকডাউন হয়ে গেলে কী খাবো, কীভাবে চলবো সেই অনিশ্চয়তায় গ্রামে চলে যাচ্ছি পরিবার নিয়ে।’

আজাদ নামে এক যাত্রী বলেন, গতবার ‘লকডাউনে’ ঢাকাতেই আটকে পড়েছিলাম। পরে কষ্ট করতে হয়েছে অনেক। তাই এবার গ্রামে ফিরছি। অন্তত কাজ বা খাদ্যের সমস্যা তো হবে না আশা করি। আর নিু আয়ের মানুষদের পরিবারই তো সবকিছু। তাই গ্রামে পরিবারের কাছে ফিরছি।
যাত্রী পরিবহনের বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও তৎপরতাও চোখে পড়েনি। তবে গাবতলী জোনের ট্রাফিক বিভাগের টিআই কাজী মাহাবুব বলেন, ‘গাবতলী বেরিকেড দিয়ে যেসব গাড়ি রাজধানীর বাইরে বের হচ্ছে, সেসব গাড়ি আমরা নজরদারিতে রাখছি। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা সে বিষয়গুলো আমরা খেয়াল করছি।’

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অনেককে মোটরসাইকেল, প্রাইভেকার বা মাইক্রোবাসে ঢাকায় ঢুকতে ও ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে ও যাত্রাবাড়ী থানার পাশে অবস্থান করে দেখা যায়, অনেকেই মাইক্রোবাসে ঢাকায় ঢুকছেন। থানার পাশ থেকে অনেকে সরাসরি মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে করে ঢাকা থেকে কুমিল্লা, চাঁদপুর ও চট্টগ্রামে যাচ্ছেন যাচ্ছেন।

কুমিল্লার সাইফুর রহমানের মা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন। আগামী সোমবার থেকে দেশে কঠোর লকডাউন। তাই গতকাল শনিবার সকালেই মায়ের দেখভাল করার জন্য কুমিল্লা থেকে রওনা দেন তিনি। সাইফুর রহমান বলেন, অন্য সময় কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকার প্রয়োজন পড়ত। মাইক্রোবাসে আসতে খরচ পড়েছে ৭০০ টাকা। তিনি জানালেন, তার সহযাত্রী ছিলেন চালকসহ মোট ১৪ জন। পথে দুবার পুলিশ আটকায়। সাইফুর জানান, এ সময় তিনি চালককে পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে দেখেন। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদে যাত্রী, চালক ও সহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লা থেকে মেঘনা ব্রিজ পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় এসে ঢাকার লোকাল বাসে করে রাজধানীতে ঢুকতে হচ্ছে। একইভাবে ঢাকা থেকেও যেতে হচ্ছে যাত্রীদের।

সোমবার থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ার আগেই নাসিমুল ইসলাম গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম ফিরতে চান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী তাই সকালে এসেছিলেন যাত্রাবাড়ীতে। এসে জানতে পারেন, মাইক্রোবাসে চট্টগ্রাম ফেরার ব্যবস্থা আছে। তবে সরাসরি চট্টগ্রাম পর্যন্ত মাইক্রোবাস পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথমে কুমিল্লা পর্যন্ত যেতে হবে, তারপর আবার কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

নাসিমুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লা পর্যন্ত সবার কাছে ৬০০ টাকা করে নিচ্ছে। আর কুমিল্লা থেকে গাড়ি পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে। এতে আরও ২০০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ হতে পারে।

ঢাকা থেকে কুমিল্লায় অনেককেই মোটরসাইকেল ভাড়া করেও যেতে দেখা গিয়েছে। বিশেষ করে যারা চাঁদপুর দিকে যাচ্ছিলেন, তারা মোটরসাইকেলে প্রথমে কুমিল্লায় যান। আর এতে খরচ পড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।

এদিকে, সারাদেশে কঠোর লকডাউনের সরকারি ঘোষণা আসার পর ঢাকা ছাড়তে মানুষের ঢল নেমেছে শিমুলিয়ায় ফেরি ঘাটে। শনিবার ভোর থেকেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা মানুষের ভিড় বেড়েছে পদ্মার এ ঘাটে। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই হাজার হাজার মানুষ ফেরিতে গাদাগাদি করে পাড়ি দিচ্ছে পদ্মা।

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত আহমেদ বলেন, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে এখন ১৪টি ফেরি সচল রয়েছে। লকডাউনের নিয়ম অনুযায়ী ফেরিতে শুধু রোগী বহনকারী গাড়ি এবং জরুরি পণ্য পরিবহণের গাড়ি ছাড়া সবকিছু পারাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উপক্ষো করেই ঘাটে ভিড় জমাচ্ছেন যাত্রীরা। এছাড়া ঘাটের দুই পাড়ে শতশত যান পারাপারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। রাজধানী ছাড়ার পাশাপাশি অনেকে ফিরছেও। তিনি বলেন, বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট থাকায় ঘাটে আসার আগেই অনেক যানবাহন ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারপরও চাপ কমানো যাচ্ছে না।

লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলার বন্ধ থাকায় ফেরিতে করেই যাত্রী পারাপার হচ্ছে। তবে গণপরিবহন না থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যেতে নানা বিড়ম্বনায় পড়ছে হচ্ছে লোকজনকে। ৩ নম্বর পন্টুন সংযোগ সড়ক বর্ষার পানিতে জলমগ্ন হওয়ায় দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে।
এদিকে জেলায় ২০টি চেকপোস্ট বসিয়ে লকডাউন কার্যকরে কাজ করা হচ্ছে বলে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন জানান।
সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলায় এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৯০৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আর মারা গেছে ৭১ জন।

গত মঙ্গলবার থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় ঢাকাকে সারা দেশ থেকে ৯ দিনের জন্য বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ জন্য আশপাশের কয়েকটি জেলাসহ দেশের মোট সাতটি জেলায় সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচল (জনসাধারণের চলাচলসহ) ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া সারা দেশে দূরপাল্লার বাস ও সকল রেলসেবা বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আগামীকাল সোমবার (২৮ জুন) থেকে সাতদিনের জন্য সারাদেশে কঠোর লকডাউন শুরু হচ্ছে। এসময় জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি কারণ ছাড়া ঘর থেকে কেউ বের হতে পারবেন না। কঠোর লকডাউনের সময় জরুরি পণ্যবাহী বাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহনের চলাচল বন্ধ থাকবে। অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত যানবাহন শুধু চলাচল করতে পারবে। গণমাধ্যম এ বিধিনিষেধের আওতামুক্ত থাকবে।

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা