জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক :
করোনা প্রতিরোধে টিকার যৌথ উৎপাদনে চীনা কোম্পানি বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চীনা কোম্পানি ‘আর অ্যান্ড ডি’ ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে বলে গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের ডেপুটি চিফ অব মিশন হুয়ালং ইয়ান। চীনের ডেপুটি চিফ অব মিশন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বার্তায় এ তথ্য জানান। হুয়ালং ইয়ান লিখেন, চীনা ভ্যাকসিন আর অ্যান্ড ডি সংস্থা ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন উৎপাদনে বাংলাদেশি অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে। চীন এ পর্যন্ত প্রায় ১০০টি দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে।
কোভ্যাক্সকে ১০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিনের প্রথম ব্যাচ সরবরাহ করবে। চীন বহু উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে যৌথ গবেষণা ও উন্নয়ন ও সমবায় উৎপাদন পরিচালনা করেছে এবং তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনায় বিদেশি দেশগুলোকে সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সমর্থন করেছে। চীনা টিকা আন্তর্জাতিক মহলে বেশ সুনাম অর্জন করেছে বলেও জানান ডেপুটি চিফ অব মিশন। গত ২১ মে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
সেদিন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে করোনার টিকার যৌথ উৎপাদনে চীনা কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করা হবে। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের করোনা টিকার যৌথ উৎপাদনের অনুরোধ করেন।
সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্র উল্লেখ করে বলেন, চীন বাংলাদেশে করোনার টিকার যৌথ উৎপাদনে সে দেশের কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করবে।
টিকা পেতে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন
রাশিয়ার উদ্ভাবিত করোনার টিকা স্পুটনিক-ভি কিনতে চুক্তি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গণমাধ্যমকে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এখন শুধু বাংলাদেশ সরকারের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষা। টিকা কেনার প্রাথমিক সিদ্ধান্তের পর বেশ কিছু বিষয় নিয়ে রুশ সরকারকে সংশোধনী দিয়েছিল বাংলাদেশ। পরে সেসবের সংশোধনী এনে দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি হয়।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী নতুন চালান না আসায় রাশিয়া ও চীন থেকে টিকা কেনার চেষ্টা চালায় বাংলাদেশ। এমনকি রাশিয়ার টিকা বাংলাদেশে উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানানো হয়েছিল। গত রোববার রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার আই ইগনাতোভ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দেখা করেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা টিকা সরবরাহে এবং আপনাদের জনগণকে করোনা মোকাবিলায় সহায়তায় প্রস্তুত। টিকা পেতে চুক্তি প্রায় হয়ে গেছে এবং ভালো মতোই হবে এবং এটা খুব দ্রুতই হবে।
এ মাসেই আসছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখ টিকা
কোভিড-১৯ মহামারীতে ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যে দেশে বন্ধ হয়ে যায় টিকার দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম। টিকার সংকট দেখা দেওয়ায় টিকার নিবন্ধনও বন্ধ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা আনার প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। যুক্তরাষ্ট্র-চীন থেকে টিকা এসেছে।
চলতি মাসে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিনের ১০ লাখ ডোজ আসছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, এই টিকা বাংলাদেশ পাবে কোভ্যাক্সের আওতায়। এ ছাড়া ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকেও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার চালান আসার কথা রয়েছে আগস্টে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কোভ্যাক্স আমাদের জানিয়েছে, জুলাই মাসে ১০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসবে। আর সেরাম ইনস্টিটিউটের স্থানীয় প্রতিনিধি আমাদের জানিয়েছে, আগস্ট মাস থেকে আমাদের টিকা দিতে থাকবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কত ডোজ করে টিকা দেবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের তিন কোটি ডোজ কেনার জন্য গত বছরের শেষ দিকে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। সেই টিকার প্রথম চালান পাওয়ার পর ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে গণটিকাদান শুরু হয়। কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউট দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ পাঠানোর পর ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে সংকটে পড়ে বাংলাদেশ। কেনা টিকার বাইরে ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে ৩২ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড পেয়েছিল বাংলাদেশ।
সব মিলিয়ে হাতে ছিল এ টিকার ১ কোটি ২ লাখ ডোজ। পর্যাপ্ত টিকা না থাকায় ২৫ এপ্রিল দেশে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যায়নি। এ পরিস্থিতিতে সরকার চীনা টিকা কেনার উদ্যোগ নিলেও যারা প্রথম ডোজে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন, তাদের জন্য ওই টিকার বিকল্প নেই।