মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি :
আরিচা-কাজিরহাটনৌরুটে তিন দিন যেতে না যেতেই আবার ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দুই পাড়েই আটকে পড়েছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস। আজ ১৮ জুন শুক্রবার সকালে আরিচা ফেরি ঘাট এলাকা থেকে ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। আটকে পড়া এসব যানবাহনের যাত্রী এবং যানবাহন শ্রমিকরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এভাবে দফায় দফায় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক ফেরি সার্ভিস চালু রাখা দুরূহ হয়ে পড়েছে। ফেরি ও ঘাট সংকট এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন যানবাহন শ্রমিকরা। ফলে ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকেই আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে স্বাভাবিক ফেরি চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা অফিস সুত্রে জানা গেছে, আরিচা ও কাজিরহাট একটি করে ঘাট নির্মাণ এবং চারটি ফেরি দিয়ে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারী আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। পাবনা-ইশ্বরদীসহ উত্তরাঞ্চলের যানবাহন ও যাত্রীদের রাজধানী ঢাকায় সহজ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে এ নৌরুট। ফলে ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকে এ নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তুু ফেরির সংখ্যা ও ঘাট বাড়ানো হয়নি। যানবাহনের তুলনায় ফেরি ও ঘাটের সংকট দেখা দিয়েছে। চারটি ফেরির মধ্যে প্রতিদিনই দু/একটি ফেরি বিকল থাকছে এবং ফেরি লোড-আনলোডের এ্যাপ্রোচ রাস্তায় গাড়ির চাকা আটকে পড়ছে। এতে ফেরি লোড-আনলোড ব্যহত হওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকছে।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ফেরি আনলোড করতে গিয়ে কাজিরহাট ফেরি ঘাটের এ্যাপ্রোচ রাস্তায় পণ্যবাহী একটি ট্রাকের চাকা ফেঁসে (আটকে) যায়। এতে ফেরি লোড-আনলোড করতে না পাড়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে।
এদিকে, নতুন ফেরি বেগম সুফিয়া কামাল মেরামত শেষে একদিন চলার পর আবার বিকল হয়ে পড়েছে। মেরামত শেষে গত ১৬ জুন একদিন চলার পর র্যামের সমস্যা দেখা দিলে গত ১৭ জুন থেকে আবার ফেরিটি মেরামতের জন্য ঘাটেই নোঙর করে রাখা হয়েছে। এতে শুক্রবার সকাল থেকে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে যানবাহনের তুলনায় ফেরি সংকট দেখা দিয়েছে। ফেরি পার হতে আসা যানবাহনগুলো নদী পার হতে না পেরে আরিচা ঘাটেই অপেক্ষা করছে। তিন দিন আগে আসা পণ্যবাহী অনেক ট্রাক এবং যাত্রীবাহী প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসগুলো শুক্রবার সকালে আরিচা ঘাটে এসে দুপুরেও ফেরি পার হতে পারেনি। গাড়ির তুলনায় ফেরি স্বল্পতা এবং দুই পারে মাত্র একটি করে ঘাট হওয়াতে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আরো দু’টি ফেরি এবং দুই পারে আরো দু’টি বিকল্প আরেকটি ঘাট থাকলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না বলে যানবাহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন।
ট্রাক চালক মো: হেদায়েত হোসেন জানান, তিনি ঢাকা থেকে পণ্যবাহী বোঝাই করে গত বুধবার রাতে আরিচা ঘাটে এসে পৌঁছান। শুক্রবার দুপুরেরও তিনি ফেরি পার হতে পারেননি। তিন দিন ধরে গাড়ি নিয়ে ঘাটে এসে ফেরির অপেক্ষায় লাইনে বসে আছেন। এতে তাঁর খাওয়া-দাওয়াসহ নানা ধরনের সমস্যার পড়তে হচ্ছে। তারা রাস্তার হিসাব করা নির্দিষ্ট খরচের টাকা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। তিনদিন ঘাটে এভাবে ফেরি পারের অপেক্ষায় থেকে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কখন ফেরির নাগাল পাবেন তা তিনি বলতে পারছেন না।
ফেরি পারের অপেক্ষায় বসে থাকা ট্রাক চালক মাসুদ রানা জানান, তিনি পণ্যবোঝাই ট্রাক নিয়ে ঢাকা থেকে পাবনা যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত বুধবার রাত থেকে আরিচা ঘাটে এসে ফেরি পারের জন্য অপেক্ষা করছেন। ফেরি বন্ধ থাকায় অপেক্ষার প্রহর গুণতে হচ্ছে তাকে। হাতে থাকা টাকা খরচ করে খেয়ে এখন টাকাও শেষের দিকে। ফেরি পার হতে না পেরে মহাচিন্তিত গাড়ি চালকরা।এ সমস্যার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন যানবাহন শ্রমিকরা।
বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম বলেন, নতুন করে ঘাট নির্মাণ সময়ের ব্যপার। আমাদের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত হলে ঘাট নির্মাণ করা হবে।
এ ব্যাপারে আরিচা ঘাটের ম্যানেজার মো. আবু আব্দুল্লাহ বলেন, ফেরি লোড-আনলোডের এ্যাপ্রোচ রাস্তায় গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে একটি গাড়ির চাকা আটকে পড়ে। এসময় লোড-আনলোড ব্যাহত হওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। শুক্রবার বিকাল ৩টাতেও গাড়িটি সরানো সম্ভব হয়নি। আটকে পড়া গাড়িটি সরানোর চেষ্টা চলছে। গাড়িটি সরানো হলেই ফেরি চলাচল শুরু হবে।
উল্লেখ্য, এর আগেও ফেরি সংকট এবং ঘাট সমস্যার কারণে কয়েক দফায় ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল।