ডালিয়া আল মীম বিকাশের একপর্যায়ে মানুষ তার হৃদয়ের ভাবকে , অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকে অন্য মানুষের, ভবিষ্যৎ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা যখন প্রকাশ করেছিল তখন তারা আশ্রয় নিয়েছিল বইয়ের। জীবন ও বই পরস্পর নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ। কেননা বই মানে হলো জীবনের সুখ-দুঃখ আনন্দ-বেদনার রূপকথা। মানবজীবনের চিন্তা-চেতনার বাস্তব প্রতিফলন কালির অক্ষরে মুদ্রিত বইয়ের পাতায়। তাই বলা যায় বই জীবনের প্রকাশ ব্যতীত আর কিছুই নয়।
তবে আজকাল লক্ষ করা যাচ্ছে যে , তরুণ প্রজন্ম বই পড়া থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে । এই বিষয়টি খুবই দুঃখজনক । মোবাইল ইন্টারনেটের কারণে ,আজকালকার ছেলেমেয়েরা ঠিকভাবে জনপ্রিয় বইগুলোর নাম পর্যন্ত বলতে পারে না । এ কারণে এই নতুন প্রজন্ম এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । তাদের মধ্যে থেকে বই পড়ার আগ্রহ কমে যাচ্ছে ।এই একই কারণে এক বিশাল ধস নেমেছে বই ব্যাবসায়ী দের উপরেও ।
আজকের নতুন প্রজন্ম _ বিখ্যাত সব কাব্য, মহাকাব্য, উপন্যাস এবং পদ্য – গদ্য সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা রাখে না । এ কারণে তারা স্বর্গীয় স্পর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে মোবাইল এবং ইন্টারনেট এর দিকে তারা বেশি ঝুঁকছে। এই বিষয়টি শুধু তাদের বিশাল এক জ্ঞানের পরিধি থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েই যাচ্ছে না , একই সাথে তাদেরকে করে তুলছে উশৃংখল এবং অমানবিক।
শুরু থেকেই প্রত্যেকটি পরিবারের এ বিষয়টির উপর নজরদারি করা উচিত । পরিবারের ছোট সদস্যটি কতক্ষণ পর্যন্ত মোবাইল ব্যবহার করছে এবং সে ইন্টারনেট ব্যবহার করে কি কি কাজ করছে এসব বিষয় সম্পর্কে পরিবারকে সচেতন হতে হবে । দিনের কিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় একজন শিশুকে মোবাইল এবং ইন্টারনেট ব্যাবহার করতে দেওয়া যেতে পারে ,তবে সে কোনো ভুল কাজ করছে কিনা এ বিষয়েও লক্ষ রাখা আবশ্যক।
” আপনার সন্তানকে বই উপহার দিন ” – তার বয়স অনুযায়ী তাকে ঈশপের গল্প, ছোটদের গল্প,গোয়েন্দা গল্প, উপন্যাস ,কাব্য এবং মহাকাব্য , এই ধরনের বই উপহার দিতে পারেন। এতে করে তার পড়ার আগ্রহ বাড়বে এবং জ্ঞানের পরিধি ও বাড়বে। অন্যদিকে একজন ব্যাক্তি যখন বই পড়ে তখন তার ভেতরের মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটে । বই পাঠে মানুষের কোমল মনে জন্ম নেয় আনন্দ-বেদনা, বিস্ময় – নীতি, সহানুভূতি- স্নেহ, মায়া-মমতা, ভক্তি প্রভিতি সুকুমার বৃত্তি । বই পাঠিয়ে একজন মানুষের মনে এক অপূর্ব শিহরণ জাগে। বই পাঠের মাধ্যমে মানুষ সত্য , সুন্দর ও কল্যাণের সন্ধান পায় । পাঠক বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে এবং অন্যকে জানাতে পারে।
অতীত , বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মধ্যে সেতু রচনা করে যুগোত্তীর্ণ গ্রন্থরাজি ।
অন্যদিকে বই জ্ঞানের বাহক হলেও বই নির্বাচনের ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কেননা বাজারে বর্তমান অশ্লীল ও নিত্মমানের বইয়ের ছড়াছড়ি । এসব বই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চরিত্রের উপর বিদ্রুপ প্রভাব ফেলে। তাছাড়া বই পড়ার প্রকৃত আনন্দ কেবল ভালো বই থেকেই পাওয়া সম্ভব ; খারাপ ও অশ্লীল বই থেকে নয়। তাই চরিত্র গঠন ও জ্ঞান অন্বেষণের মহান স্বার্থে সকলের উচিত ভালো বই নির্বাচন করার বিশেষ ক্ষমতাটি অর্জন করা।
বইয়ের প্রভাব পাঠক চিত্তে একটা বিরাট অংশ জুড়ে থাকে। জাতি গঠনে বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । বই পাঠে মানুষ আনন্দ লাভ করে থাকে সত্যি , তবে আনন্দ উপলব্ধির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়। বইয়ের জগৎ থেকে আনন্দ লাভের জন্য মানুষকে অধ্যাবসায়ী হতে হবে। উৎকৃষ্ট বই-ই মানুষকে প্রকৃত সুখ এবং আনন্দ দান করতে পারে।
আর আমরা সবাই এটা জানিয়েছে বই পাঠের আনন্দ দীর্ঘদিন মানুষের মনকে সুরভিত করে রাখে।